১০:০৭ অপরাহ্ন শনিবার, ১৭-মে ২০২৫

কৃষি খামারের যুগ্ম-পরিচালকের বিরুদ্ধে বিএডিসির জায়গা ভাড়ার অভিযোগ,  ভোল পাল্টে যোগ দিয়েছেন জামায়াতে   

প্রকাশ : ১৭ মে, ২০২৫ ০২:৪৪ অপরাহ্ন

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ: সফেদ চাদরে মোড়া নূরানী চেহারার এই মানুষটি দেখতে কামেল বুজুর্গ মনে হলেও তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, পল্টিবাজ হিসেবে বিএডিসিতে পরিচিত। নিজ গ্রামে এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম কৃষি খামারে যুগ্ম-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ২০২৪ সালে আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে করেছেন রাতের ভোট। নৌকায় ভোট না দিলে দিনমজুর শ্রমিকদের করেছেন চাকরিচ্যুত। বহুল আলোচিত এই ব্যক্তির নাম কে এম কামরুজ্জামান শাহিন। তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর দত্তনগর কৃষি খামারে অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে যুগ্ম-পরিচালক হিসেবে প্রায় তিন বছর ধরে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করে যাচ্ছেন। তার পিতা আব্দুল মজিদ মহেশপুর উপজেলার কুশাডাঙ্গা গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার দত্তনগরে ২ হাজার ৭৩৭ একর জমি উপর এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার গড়ে উঠছে। সেখানে কুশাডাঙ্গা, গোকুলনগর, করিঞ্চা, মথুরা ও পাথিলা বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে। এসব খামারে একজন করে উপ-পরিচালক দায়িত্বে থাকলেও পাঁচটি খামারের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা যুগ্ম-পরিচালক। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক হওয়ায় দুর্দান্ত দাপটের সাথে অধিপত্যে বিস্তার করে এখনো ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছেন কে এম কামরুজ্জামান শাহিন। 
স্থানীয় লোক হওয়ায় ৫ আগস্টের পরে তিনি ভোল পাল্টে সেজেছেন জামায়াতের সমর্থক। আর নিজেকে জামায়াত প্রমাণ করতে স্বরুপপুর ইউনিয়ন জামায়াতের কথিত সমর্থকদের দিচ্ছেন বিএডিসির কোটি টাকার জায়গায় দোকান ঘর তোলার সুবিধা। ইতিমেধ্য বাজার কমিটির সভাপতি গোকুল নগর গ্রামের আব্দুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক কেশবপুর গ্রামের হালিম, একই গ্রামের কেশবপুর গ্রামের আলী আহম্মেদ, স্বরুপপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান সাথি, গোকুলনগর গ্রামের আব্দুস সালাম, একই গ্রামের আবুল কালাম, আব্দুল হান্নান, মশা মিয়া ও খাজা ময়েন উদ্দীনসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দোকান ঘর তোলার সুযোগ করেছেন। এতে বিএডিসি প্রায় তিন কোটি মুল্যমানের এক একর জমির দখল হারিয়েছে। সবচে আশ্চার্য্যের বিষয় খামারের বাউন্ডারির মধ্যে আব্দুস সালাম, কালাম ও আলী আহম্মেদ নামে তিন ব্যক্তির লেদ কারখানা গড়ে উঠেছে। এখান থেকে যুগ্ম-পরিচালক নিয়েছেন অনৈতিক সুবিধা। 
নাম প্রকাশে একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করেন, খামার সংলগ্ন কুশাডাঙ্গা গ্রামে যুগ্ম-পরিচালক কামরুজ্জামান শাহিনের বাড়ি হওয়ায় কোন শ্রমিক সালাম না দিলে পরদিন তার চাকরি থাকেনা। এলাকার বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট আ.লীগের প্রার্থীকে জয়ী করতে কুশাডাঙ্গা গ্রাম থেকে জোরপুর্বক সাধারণ মানুষকে নৌকায় ভোট দিতে বলেন। ক্ষমতা আর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিএডিসির গাড়ি ও জনবল ব্যবহার করেন।  
দত্তনগর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, নৌকার বিজয় নিশ্চিত হলে- যুগ্ম-পরিচালক কামরুজ্জামান শাহিন নিজ গ্রাম কুশাডাঙ্গায় খাশি ছাগল জবাই করে উৎসব করতেন। নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দেওয়ায় তিনি খামারের শ্রমিক রবিউল ইসলাম, রানা, আলী আহম্মদ ও আব্দুস সালামসহ একাধিক শ্রমিককে বরখাস্ত করেন। নৌকা আর আ.লীগ হলেও তার কাছে বিশেষ সুবিধা পেতেন কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও শ্রমিক। নিজের গাঁয়ে আ.লীগের তকমা লাগিয়ে শ্রমিক নিয়োগ, ধান ও ওষুধ ক্রয় টেন্ডারে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেন। ফলে গত অর্থ বছরের আর লাইন ধান টেন্ডারের টাকাও এখনো বকেয়া রয়েছে। গত দুই বছরের সার কীটনাশকসহ বিভিন্ন টেণ্ডারের অডিট করলেই নূরানী চেহারার অন্তরালে থাকা কুৎসিৎ চেহারা বেরিয়ে আসবে। 
এদিকে আওয়ামী সমর্থক ঠিকাদার হওয়ায় জনৈক ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে টেন্ডারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে দরপত্র পাওয়ার সুপারিশ করেছিলেন কে এম কামরুজ্জামান। কিন্তু যা হেড অফিস সেই সুপারিশ গ্রহণ করেনি।
অন্যদিকে ভিন্নমত দমনে কামরুজ্জামানের জুড়ি নেই। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক হলে ৬০ বছর বয়স হলেই বিদায় করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী ঘরনার হলে তার কাছে বয়স কোন বিষয় না। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ করেন, বাড়িতে আসলেই রাতের আধারে তার নিজ বাড়িতে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ে সরকার বিরোধী ও খামার ধ্বংসের পরিকল্পনা করেন। 
সূত্র মতে, পদ্মার এপারে দত্তনগরসহ ২২টি খামারে ফ্যাসিস্ট এই কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে বিএডিসিতে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারা করছেন। এ ব্যাপারে দত্তনগর কৃষি খামারের যুগ্ম-পরিচালক কে এম কামরুজ্জামান শাহিনের মুঠোফোনে বুধবার রাতে একাধিকবার ফোন করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা হেড অফিসের বিএডিসির বীজ উৎপাদন খামার বিভাগের ব্যবস্থাপক মোঃ রুহুল আমিন বলেন, বিষয়টি তিনি জানলেন। তিনি তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। 
শীর্ষনিউজ/এম